‘…আমাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ করার সময় এখনো আসেনি।’ গত আগস্টে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিলাওয়াল ভুট্টোর কাছে পাঠানো শুভেচ্ছা কার্ডে এ কথাটি লিখেছিলেন হিনা রাব্বানি খার। ২১ সেপ্টেম্বর বিলাওয়ালকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে পাঠানো কার্ডে হিনা নিজ হাতে লিখেছেন, ‘আমাদের ভালোবাসা চিরন্তন, শিগগিরই আমরা দুজন হব, শুধুই দুজনার।’
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টোর সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের সম্পর্কের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। আলোচিত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকেও। বেশির ভাগ গণমাধ্যমই বাংলাদেশের ইংরেজি সাপ্তাহিক ব্লিট্স্-এর বরাত দিয়ে বিলাওয়াল-হিনার সম্পর্কের খবর প্রকাশ করেছে।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২৪ বছরী বয়স বিলাওয়ালের সঙ্গে তাঁর চেয়ে ১১ বছর বড় হিনার সম্পর্ক মেনে নিতে পারছেন না জারদারি। তাই হিনাকে হত্যার জন্য দুবাইয়ের এক বন্ধুর মাধ্যমে ২০ লাখ মার্কিন ডলার দিয়ে অপরাধজগতের এক খুনির সঙ্গেও যোগাযোগ করেন তিনি। হিনার সম্পর্কের বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না তাঁর স্বামী কোটিপতি ব্যবসায়ী ফিরোজ গুলজারও। হিনা-ফিরোজ দম্পতির দুই মেয়ে আছে। হিন্দুস্তান টাইমস-এর বরাত দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস জানায়, ফিরোজ গত মঙ্গলবার দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কাছে সন্দেহভাজন কয়েকটি ফোন নম্বর দিয়ে তার বিস্তারিত জানার আবেদন করেছেন। অন্য গণমাধ্যমগুলোয় বলা হচ্ছে, ফিরোজ আসলে তদন্ত সংস্থার কাছে হিনার নম্বর দিয়ে তিনি কখন, কাকে ফোন করেছেন—তার বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন।
ব্লিট্স্-এর খবরে বলা হয়, হিনা ও বিলাওয়ালের সম্পর্কের কথা জানার সঙ্গে সঙ্গে জারদারি হিনাকে ডেকে এ ব্যাপারে তাঁর কাছে জানতে চান। এ সময় জারদারি রূঢ় আচরণ করেন হিনার সঙ্গে। হিনাও কঠোর ভাষায় জারদারিকে তাঁদের ‘ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক না গলানোর’ পরামর্শ দেন। রূঢ় আচরণের কারণে হিনার কাছে ক্ষমা না চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদও ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন হিনা। বিষয়টি দ্রুতই বিলাওয়ালের কানে যায়। বিলাওয়াল বাবার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চান এবং একপর্যায়ে প্রয়োজনে ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেওয়ারও হুমকি দেন। জারদারির পরিবারের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিলাওয়াল চলতি বছরের শেষ দিকে বা আগামী বছরের শুরুর দিকে রাজনীতি ও দেশ ছেড়ে যাওয়ার মনস্থির করেছেন। হিনাও ওই সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে ব্লিট্স্ জানায়, খবরে আরও বলা হয়, জারদারি কোনোভাবেই হিনা-বিলাওয়ালের সম্পর্ক মেনে নেবেন না। তাই গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে হিনার স্বামীর মালিকানাধীন গ্যালাক্সি টেক্সটাইল মিলসের সাত কোটি রুপি বিদ্যুৎ বিল ফাঁকি কেলেঙ্কারির বিষয়টি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। হিনাকে হত্যার জন্য খুনি ভাড়া করার চেষ্টা করেন। বাবার এই কঠোর অবস্থানের কথা জানেন বিলাওয়াল। তাই তিনিও জারদারিকে জানিয়ে দিয়েছেন, হিনাকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে ঘর বাঁধবেন তিনি। হিনা দুই মেয়েকে ছেড়ে তাঁর কাছে চলে আসবেন। জানা গেছে, বিলাওয়ালের মা বেনজির ভুট্টো সুইজারল্যান্ডে কয়েক শ কোটি ডলার গোপনে রেখে গেছেন। সেই ডলারের বৈধ মালিকানা এখন বিলাওয়ালের। তাই হিনাকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডেই ঘর বাঁধার স্বপ্ন তাঁর।
জারদারি সম্প্রতি তাঁর সরকারি বাসভবনে হিনা ও বিলাওয়ালকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় পান। এরপর বিলাওয়ালের জন্মদিনে হিনার পাঠানো উপহার হাতে পড়ে জারদারির। এতেই সম্পর্কের বিষয়ে নিশ্চিত হন তিনি।
জানা যায়, হিনার সঙ্গে ফিরোজের বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে মধ্যস্থতা করছেন তাঁদের পারিবারিক এক বন্ধু। বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হলে হিনা পাঁচ তারকা হোটেল পেলো লাউঞ্জের তাঁর মালিকানার অংশ দুই মেয়ের নামে দেবেন। হিনার সঙ্গে ফিরোজের সম্পর্কের ভাঙন শুরু হয় প্রায় দুই বছর আগে। ওই সময় হিনা তাঁর স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। এটা সহ্য করতে পারেননি তিনি। একপর্যায়ের ঘুমের ওষুধ সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন হিনা। এ সময় হিনার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিলাওয়ালের সঙ্গে। ধীরে ধীরে তা প্রণয়ে রূপ নেয়। ওয়ান ইন্ডিয়া টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বিলাওয়ালের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে শাস্তি দেওয়া হতে পারে হিনাকে। তাঁদের সম্পর্কের বিষয়ে দুজনের পরিবার বা সংশ্লিষ্ট কেউ কোনো বিবৃতি দেননি। ব্লিট্স্, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস ও ওয়ান ইন্ডিয়া নিউজ।