হলমার্ক ছাড়াও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে। এসব অর্থ আত্মসাতের ঘটনার সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের একাধিক শাখা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। এ নিয়ে গত শনিবার একটি জাতীয় দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে দেখা গেছে হলমার্ক ছাড়াও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উলি্লখিত তিন ব্যাংক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এ ঘটনা উদঘাটিত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি আত্মসাৎকৃত অর্থ শ্রেণীবিন্যাস করার নির্দেশ দিয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ মানাও হয়েছে।
ব্যাংকিং সেক্টর জুড়েই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে। কেবল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকই নয়, প্রাইভেট ব্যাংকগুলোতেও অর্থ আত্মসাৎ বা জালিয়াতি নিত্যদিনের ঘটনা। এর সামান্যই লোক সমক্ষে প্রকাশ পায়। কী রাষ্ট্রায়ত্ত কী প্রাইভেট মালিকানাধীন ব্যাংক, উভয় ধরনের ব্যাংকেই সাধারণ জনগণের আমানত সঞ্চিত থাকে। আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবসায় আমানতকারীদের সঞ্চয় অক্ষুণ্ন থাকলেও তাদের বিশ্বাসে ফাটল ধরে। এর পরিণতিতে আর্থিক ব্যবস্থায় ধস নামে। এজন্য ব্যাংকিং সেক্টরের আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি ঘটা কাম্য নয়।
ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি করা মুখের কথা নয়। সামান্য অনিয়মও ধরার ব্যবস্থা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের স্বাভাবিক কর্মপ্রক্রিয়া চালালেই সামান্য অনিয়মও সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ পায়। প্রশ্ন হচ্ছে, কয়েক বছর ধরে হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়মের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ল কেন। এ বিলম্বিত বোধদয়ের মধ্যদিয়ে এটাই প্রমাণিত হয়, কোথাও কোন আর্থিক অনিয়ম ঘটছে কিনা_ সেটার ওপর যাদের নজরদারি করার দায়িত্ব তারা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করেছেন। এখন এ নজরদারির দায়িত্ব কার কতটা সে প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক করা হচ্ছে। একজন আরেকজনের ওপর দায় চাপাচ্ছে, একজন অরেকজনের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এর ফলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, আর্থিক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো পার পেয়ে যেতে পারে এবং তাদের সঙ্গে যেসব ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে তারাও পার পেয়ে যাবে।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা যদি যার যার দায়িত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণাই না রাখেন তবে ব্যাংকিং সেক্টরের ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। সুতরাং দায়িত্ব কর্তৃত্ব নিয়ে তর্ক-বির্তকের দ্রুত অবসান ঘটিয়ে জালিয়াতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থ জালিয়াতির সঙ্গে উপদেষ্টাসহ রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠছে। তর্ক-বিতর্কে মেতে থাকলে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে উঠবে, অতীতে এমন ব্যর্থতার বহু নজির রয়েছে।
আমরা চাই, অর্থ জালিয়াতি বা আত্মসাতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আমরা মনে করি, সব রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাংকসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই অনিয়ম খুঁজে বের করার জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন করে দ্রুত তদন্ত করা উচিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুরোধে দুদক হলমার্কের ঘটনা তদন্ত করছে। এ তদন্ত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হবে। অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের তদন্তও করতে হবে। এর সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদেরই কেবল শাস্তি দিলে চলবে না। যেসব প্রতিষ্ঠান অর্থ আত্মসাৎ করেছে এবং এ অর্থ আত্মসাতে যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি ইন্ধন জুগিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে হবে। অপরাধী যে বা যারাই হোক তাদের সবাইকেই আইনের আওতায় আনতে হবে। কেবল অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, কাদের গাফিলতিতে বা নীরব সম্মতিতে বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম ঘটতে পেরেছে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।