মেরামত কাজ শেষ হওয়ার প্রায় ৯ বছর অতিক্রম হতে চললেও এমভি বনানী নামে একটি জাহাজ পড়ে আছে চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দর ডকইয়ার্ডে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে সংস্কার শেষে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এখনও জাহাজটিকে নেয়া হচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের এমন উদাসীনতায় চালুর অপেক্ষায় পড়ে থাকা জাহাজটি ফের বিকল হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়া ২০০৪ সালে স্পিওয়ে হতে আনডকিংয়ের পর এ দীর্ঘ বছর অতিবাহিত হলেও আর কোন ডকিং মেরামত করা হয়নি। ফলে জাহাজের হালসহ অন্যান্য স্টিল নির্মিত অংশ মরিচায় ব্যাপকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। একই সঙ্গে মেইন ইঞ্জিনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ দীর্ঘদিন ধরে অলস বসে থাকায় প্রায় চলাচলের ফের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বর্তমানে জাহাজটির অবস্থা খুবই নাজুক। জাহাজটি মেরামত বিহীনভাবে মৎস্য বন্দরে আরও অধিক সময় পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে মূল্যহীন হয়ে পড়বে এবং পানির নিম্নাংশ ছিদ্র হয়ে বেসিনে নিমজ্জিত হয়ে একটি স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে এমনটি বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে মেরামত কাজ শেষ হওয়ার পর চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দর কর্তৃক সম্পাদিত কাজের ৫১ লাখ ১০ হাজার ৯৮১ টাকার চূড়ান্ত বিল পরিশোধের জন্য প্রকল্প পরিচালকের দফতরে দাখিল করা হলে প্রকল্প পরিচালক ৩ কিস্তিতে মোট ৩৯ লাখ ১৩ হাজার ৬৭৮ টাকা পরিশোধ করে। অবশিষ্ট ১১ লাখ ৯৭ হাজার ৩০৩ টাকা অপরিশোধিত থেকে যায়। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় অদ্যাবধি জাহাজটি না নেয়ায় বর্তমানে দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ লাখ টাকা।
জাহাজটি মেরামত শেষের দীর্ঘ সময় পার হলেও কেন নেয়া হচ্ছে না এক প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মো. জাফর আলম বলেন, এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর অবগত নয়, এটি কার দায়িত্বে তা-ও আমার জানা নেই।
চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দর সূত্রে জানা যায়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, মেরিন পার্ক প্রতিষ্ঠা ও ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এমভি বনানী জাহাজ মেরামত-রক্ষণাবেক্ষণ, নবায়ন ও আধুনিকায়নের জন্য বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দরের মেরিন ওয়ার্কশপ ডকইয়ার্ডকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০০৩ সালের ২২ অক্টোবর কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।
কার্যাদেশ মোতাবেক কাজ সম্পাদন শেষে চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দর কর্তৃক জাহাজটি হস্তান্তরের জন্য ২০০৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প পরিচালককে পত্র দেয়া হয়। পরবর্তীতে মহাব্যবস্থাপক, চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দর কর্তৃক সম্পাদিত কাজের ৫১ লাখ ১০ হাজার ৯৮১ টাকার চূড়ান্ত বিল পরিশোধের জন্য প্রকল্প পরিচালকের দফতরে দাখিল করা হয়।
এ বিলের বিপরীতে প্রকল্প পরিচালক ৩ কিস্তিতে মোট ৩৯ লাখ ১৩ হাজার ৬৭৮ টাকা পরিশোধ করে। অবশিষ্ট ১১ লাখ ৯৭ হাজার ৩০৩ টাকা অপরিশোধিত থেকে যায়। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় অদ্যাবধি জাহাজটি না নেয়ায় বর্তমানে দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ লাখ টাকা। জাহাজটি চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দরে বার্থিংয়ে রেখে দেয়া হয়েছে। এতে বার্থিং ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দরের পাওনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দরের মহাব্যবস্থাপক এম আবদুল কাদের (কমান্ডার বিএন) বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান বরাবরে প্রেরিত চিঠিতে মত প্রকাশ করেন, জাহাজটি না নেয়ায় এবং মেরামত রক্ষণাবেক্ষণ না করায় প্রতীয়মান হয় যে, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জাহাজটি আর প্রয়োজন নেই তারা জাহাজটি নিতে আগ্রহী নন। এমতাবস্থায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নিকট হালনাগাদ পাওনা টাকা আদায়ে সময় নির্দিষ্ট করে দিয়ে তাগাদা দেয়া যেতে পারে।
উলি্লখিত সময়ের মধ্যে টাকা পাওয়া না গেলে পাওনার বিপরীতে জাহাজটি অধিগ্রহণ করা যেতে পারে। পরবর্তীতে জাহাজটি বিক্রয় করে অথবা আগ্রহী কোন পার্টির কাছে ভাড়া দিয়ে করপোরেশনের পাওনা টাকা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে জানা গেছে।