সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে একটি সামরিক বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে সিরীয় বিদ্রোহীরা। তারা একটি আকাশ প্রতিরক্ষা স্থাপনাও দখল করেছে। গত শনিবার বিদ্রোহীরা এ হামলা ও দখল অভিযান চালায় বলে জানিয়েছে একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী। বিদ্রোহীদের মোকাবিলায় সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিমানবাহিনীর ওপর বেশি নির্ভর করা শুরুর পর বিদ্রোহীরা তার বিমান শক্তিতে আঘাত হানল। পূর্বাঞ্চলের দির আল-জরে এই হামলার আগে বিদ্রোহীরা আলেপ্পো ও ইদলিব এলাকার সেনা ঘাঁটিতে
হামলা চালিয়েছে। দেড় বছর ধরে বিদ্রোহ মোকাবিলারত প্রেসিডেন্ট বাশার দেশের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামীণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। এই এলাকাগুলোতে বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে বাশার তাই হেলিকপ্টার গানশিপ ও জঙ্গিবিমান ব্যবহার করছেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’এর রামি আবদুল রহমান জানিয়েছেন, দির আল-জরে আকাশ প্রতিরক্ষা স্থাপনার একটি ভবন দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। এখানে তারা ১৬ জন সরকারপন্থিকে বন্দী করেছে ও অজ্ঞাত সংখ্যক বিমান বিধ্বংসী রকেট আটক করেছে। বিদ্রোহীদের হাতে আটক সরকারপন্থি সামরিক কর্মকর্তা, সেনাসদস্য ও রকেট চালিত গ্রেনেডসহ আটক করা বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র ইন্টারনেটে পোস্ট করা আন্দোলনকারীদের ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে। আল-আরাবিয়ার ফুটেজে হামলার সময় আটক করা রকেট ও গোলাবারুদ দেখানো হয়। বিদ্রোহীরা সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় ইরাকি সীমান্তের আলবু কামালে হামদান সেনা বিমান ঘাঁটিতেও হামলা চালিয়েছে বলে জানান আবদুল রহমান। তবে এ হামলায় তারা তেমন কোন সাফল্য পায়নি বলে জানান তিনি।
ইদলিব প্রদেশের তাফতানাজ বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে কয়েকটি হেলিকপ্টার ক্ষতিগ্রস্ত করার দাবি জানানোর তিনদিন পর বিদ্রোহীরা নতুন এসব হামলা চালানোর দাবি জানাল। গত সপ্তাহে একটি জঙ্গিবিমান ও হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করার দাবিও করেছিল বিদ্রোহীরা। এদিকে দামেস্কের আশপাশে ব্যাপকভাবে হামলা চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। সিরিয়ান অবজারভেটরি জানায়, গত শুক্রবার রাতভর বিদ্রোহীদের সঙ্গে রাস্তায় সংঘর্ষের পর গত শনিবার তামাদানের দক্ষিণাঞ্চলের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে গোলাবর্ষণ হয়েছে। আরেকটি মানবাধিকার গোষ্ঠী লোকাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি জানিয়েছে, হাজার আসওয়াতের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনী গোলা নিক্ষেপ করেছে। সিরিয়ার বৃহত্তম শহর আলেপ্পোয় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের তুমুল সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা আলেপ্পোর উত্তরাঞ্চলের শহর আজাজেও ব্যাপক গোলাবর্ষণের কথা জানিয়েছে। গত সপ্তাহে বিদ্রোহীরা এ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।
সিরীয় শরণার্থীদের সঙ্কুলানে আরও অর্থ চাইল জর্ডান
সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জর্ডান যে পরিমাণ অর্থ চেয়েছিল তা বাড়িয়েছে দেশটি। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার সঙ্গে যৌথ আবেদনে জর্ডান জানায়, শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় তাদের ৭০ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন। কয়েকদিন আগে দেশটি ৩০ কোটি মার্কিন ডলার চেয়েছিল। সিরিয়ায় সহিংসতা অব্যাহত থাকায় শরণার্থীদের সংখ্যা বাড়ার কারণে এ আবেদন করা হলো। স্থল ও আকাশ পথে বোমা হামলার কারণে আক্রান্ত এলাকার হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী হিসেবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। জর্ডানের পরিকল্পনামন্ত্রী জাফর হাসান বলেন, খুব তাড়াতাড়ি তার দেশে সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ৪০ হাজারে দাঁড়াবে। যা দেশকে তীব্র পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের দিকে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা এ যৌথ আবেদন জানিয়েছে, আমাদের সিরীয় ভাইদের মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার জন্য।
শরণার্থীদের স্রোত ঠেকাতে সিরিয়ার ভেতরে ‘নিরাপদ এলাকা’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে তুরস্ক। সিরিয়া বিষয়ে বিভক্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেছে। এ ধরনের একটি এলাকা রক্ষা করতে সেনা পাহারা বসাতে হবে বলে পশ্চিমা শক্তিগুলোও প্রস্তাবটি এড়িয়ে যাচ্ছে। রয়টার্স, বিবিসি।