সড়কগুলো বেহাল। পথে পথে পোহাতে হবে চরম ভোগান্তি । মহাসড়কে থাকবে দীর্ঘ যানজট। ট্রেনের শিডিউলেও বিপর্যয় ঘটতে পারে—এতোসব দুর্ভোগের আগাম খবর জেনেও মানুষ ঈদ উৎসবের জন্য নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে। ফাঁকা হচ্ছে রাজধানী ঢাকা।
রাজধানীর যানজটের চিত্র এখন মহাসড়কে। বুধবার নোয়াখালী যেতে খোদ যোগাযোগ ও রেলপথমন্ত্রীই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কবলে পড়েন। নোয়াখালী যাওয়ার পথে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী সড়কে খানাখন্দে হেলেদুলে চলে মন্ত্রীর গাড়ি। সড়ক এমন বেহাল হলেও মন্ত্রীর দাবি, দেশের কোনো মহাসড়কই বেহাল নয়।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ফেনীর উদ্দেশ্যে যাত্রার আগে বোরহানুল হক নামের এক যাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, “ঢাকা থেকে ফেনী যেতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা। কিন্তু এখন লাগছে ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা।”
তিনি জানান, গত তিন দিনে তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা সড়কপথে ঢাকা থেকে ফেনী গেছেন। তাদের কেউ ৬ ঘণ্টার আগে ফেনী পৌঁছাতে পারেননি।
যোগাযোগ ও রেলপথমন্ত্রীর অনেক আশ্বাসেও মহাসড়কগুলোতে যাত্রীদের ভোগান্তি কমেনি। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের অভিযোগ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনেক জায়গা খানা-খন্দে ভরা।
এদিকে বাসের শিডিউলও ঠিক নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট। বাসে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। বিআরটিএর অভিযোগ কেন্দ্রে লোক নেই। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশের পরও মেরামত হয়নি সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী সড়ক।
বৃহস্পতিবার সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনের মহানগর প্রভাতীর ট্রেনে প্রায় সব বগির বেশিরভাগ ফ্যানই নষ্ট। টয়লেটের অবস্থা বলার মতো নয়। মহানগর প্রভাতী চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ৭টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সকাল ৮টায়ও তা কমলাপুর স্টেশনে ছিল।
গত তিনদিন সরজমিন কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রেনেও নানা দুর্ভোগে বাড়ি ফিরছে মানুষ। একের পর এক শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। বুধবার সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে একটি ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি সকাল নয়টার পরে প্ল্যাটফর্মে আসে। চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা সন্ধ্যার আগে ছাড়তে পারেনি। ফলে স্টেশনে দুর্ভোগের শিকার হন হাজার হাজার যাত্রী। এছাড়া তুরাগ এক্সপ্রেস, রাজশাহীর সিল্কসিটি, চট্টগ্রামের সুবর্ণ এক্সপ্রেস, যমুনা, মহানগর প্রভাতীসহ আরও বেশ কয়েকটি ট্রেনও সময়মতো ছাড়তে পারেনি।
বৃহস্পতিবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষ ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে।
এদিকে ঈদে কমলাপুর স্টেশনে চুরির ঘটনা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সকালে মহানগর প্রভাতী ট্রেনের জন্য অপেক্ষামান এক যাত্রীর মোবাইল ফোনসেট খোয়া গেছে। গত সপ্তাহে কমলাপুর স্টেশন থেকে একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিকের মোবাইল চুরি হয়। খোদ রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তখন পরিদশৃনের জন্য স্টেশনে ছিলেন। এ ঘটনার ব্যাপারে মন্ত্রীও অবগত। এভাবে প্রতিদিনই চুরির ঘটনা ঘটছে কমলাপুর স্টেশনে। বাড়ছে বখাটেদের উৎপাতও।
ছাদে যাচ্ছে যাত্রীরা: অকার্যকর মন্ত্রীর নির্দেশ!
গত কয়েকদিন ধরে যোগাযোগ ও রেলপথমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের একাধিকবার বলেছেন, ট্রেনের ছাদে কাউকে উঠতে দেওয়া হবে না। কিন্তু কার্যত মন্ত্রীর এ নির্দেশ উপেক্ষিত।
বুধবার দেখা গেছে, ট্রেনের ছাদ থেকে শুরু করে, ইঞ্জিন, ক্যান্টিন, কামরার জোড়া, বাম্পারসহ সবখানেই মানুষ আর মানুষ। রেলওয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কেউ ঝুঁকি নিয়ে চলা মানুষদের কার্যকর বাধা দিতে পদক্ষেপ নেয়নি।